বাংলাদেশের ছয় ঋতুর বৈশিষ্ট্যঃ ছয় ঋতুর নাম । six season name
৬ ঋতুতে থাকুন আমাদের সাথে। 6retu is a blog which provide entertainment by news, movie, drama, Islamic content, technology etc. 6ritu blogspot com or https://6ritu.blogspot.com/
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য
ভূমিকা :
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ । গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত,শীতও বসন্ত। এ ছয় ঋতুর আবর্তন বাংলাদেশকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে । প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য । এক এক ঋতু আমাদের জীবনে আসে এক এক রকম ফুল, ফল আর ফসলের সম্ভার নিয়ে । বাংরার প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর পালাবদল আলপনা আঁকে অফুরন্ত সৌন্দর্যের।তাতে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠে হৃদয়।গ্রীষ্মের দাবদহ,বর্ষার সজল মেঘের বৃষ্টি,শরতের আলো–ঝলমলে স্নিগ্ধ আকাশ,হেমন্তের ফসলভরা মাঠ,শীতের শিশিরভেজা সকাল আর বসন্তের পুষ্প সৌরভ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া ।ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতির এ সাজবদল বাংলাদেশকে রূপের রানীতে পরিণত করেছে ।
ঋতুচক্রের আবর্তন :
বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জলবায়ুর প্রভাব ও ভৌগোলিক অবস্থান । এ দেশের উত্তরে সুবিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা , দক্ষিণে প্রবাহিত বঙ্গোপসাগর । সেখানে মিলিত রয়েছে হাজার নদীর স্রোতধারা ।মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয় বৃষ্টি । বৃষ্টির ধারা এ দেশের মাটিকে করে উর্বর , ফুল ও ফসলে করে সুশোভিত । নদীর স্রোত বয়ে আনে পলিমাটি ।সে মাটির প্রাণরসে প্রাণ পায় সবুজ বন- বনানী, শ্যামল শস্যলতা । তার সৌন্দর্যে এ দেশের প্রকৃতি হয়ে উঠে অপরূপ । নব নব সাজে সজ্জিত হয়ে এ দেশে পরপর আসে ছয়টি ঋতু ।এমন বৈচিত্রময় ঋতুর দেশ হয়তো পৃথিবীর আর কোথা ও নেই।
ঋতু পরিচয় :
বর্ষপঞ্জির হিসেবে বছরের বার মাসের প্রতি দুই মাসে এক এক ঋতু।বৈশাখ –জৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল,ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল,কার্তিক অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল,পৌষ–মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন–চৈত্র বসন্তকাল ।তবে ঋতুর পালাবদল সবসময় মাসের হিসেব মেনে চলে না।তা ছাড়া ঋতুর পরিবর্তন রাতারাতি বা দিনে দিনেও হয় না।অলক্ষে বিদায় নেয় একঋতু,আগমন ঘটে নি:শব্দে নতুন কোন ঋতুর।প্রকৃতির এক অদৃশ্য নিয়মে যেন বাঁধা ঋতুচক্রের এই আসা- যাওয়া ।
গ্রীষ্ম :
ঋতু-পরিক্রমার প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল । গ্রীষ্মে বাংলাদেশের রূপ হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক । প্রচন্ড খরতাপ আর খাঁ খাঁ রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির হয়। নদী-নালা খাল –বিল শূকিয়ে যায়। কখনো তপ্ত বাতাসে যেন আগুনের হলকা ছুটতে থাকে । ক্লান্তি আর তৃঞ্চায় বুক শুকিয়ে আসে পথিকের । কখনো উত্তর-পশ্চিম আকাশের কোণে কালো হয়ে মেঘ জমে। হঠাৎ ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। বছরের পুরোনো সব আবর্জনা ধুয়ে মুছে যায়। জ্যৈষ্ঠ্য আসে ফলের সম্ভার নিয়ে । আম,জাম,কাঁঠাল,আনারস,লিচু ইত্যাদি নানারকম মৌসুমি ফলের সমারোহ গ্রীষ্মঋতুকে করে তোলে রসময়।
বর্ষা:
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের পর আসে বর্ষা।আকাশে দেখা দেয় সজল-কাজল মেঘ।অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টি।পৃথিবীতে প্রাণের সাড়া।আষাঢ়- শ্রাবণের বর্ষণে জেগে ওঠে বৃক্ষলতা ।কথনো একটানা বৃষ্টিতে খাল-বিল,পুকুর -নদী সব কানায় কানায় ভরে ওঠে । বর্ষার পল্লিপ্রকৃতি তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয় । সে রূপ ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় :
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে ।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের খেত জলে ভরভর
কালি – মাখা মেঘে ওপারে আাঁধার ঘনিয়াছে দেখ চাহি রে ।
বর্ষায় বাংলাদেশের নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়।নদীতে দেখা দেয় ভাঙন।বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা।এমনকি শহরাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে।বর্ষায় গরিব মানুষের দু:খ–কষ্ট বেড়ে যায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয় ।
শরৎ :
শরৎকাল বাংলাদেশের এক ঝলমলে ঋতু।বর্ষার বৃষ্টি– ধোয়া আকাশ শরতে হয়ে ওঠে নির্মল। তাই শরতের আকাম থাকে নীল।শিমুল তুলার মত সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে।এ সময় শিউলি ফুল ফোটে,নদীর তীরে ফোটে সাদা কাশফুল।নির্মল আকাশে শরতের জ্যোৎস্না হয় অপরুপ ও মনলোভা । ঘাসের বুকে শিশিরের মৃদু ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে শরতের সকাল।
হেমন্ত :
হেমন্ত বাংলাদেশের ফসল–সমৃদ্ধ ঋতু।তখন সোনার ফসলে সারা মাঠ ভরে থাকে।কৃষকের মুখে থাকে হাসি ।কাস্তে হাতে ধান কাটাতে ব্যস্ত থাকে কৃষক।নতুন ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে ব্যস্ত থাকে কৃষক ।নতুণ ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব।পাকা ধানের সোনালি দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর । সন্ধ্যা ও সকালে চারদিকে ঘন হয়ে কুয়াশা নামে।এসময় থেকে শীতের আমেজ পাওয়া যায় ।
শীত :
শীত বাংলাদেশের হিমশীতল ঋতু।শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে।শতে বিবর্ণ হয়ে গাছের পাতা ঝরে পড়ে।সকাল হলেও অনেক সময় সূর্যের মুখ দেখা যায় না।শীতে জড়সড় হয়ে যায় মানুষও প্রাণিকুল।শতের প্রচন্ডতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই গরম কাপড় পরে।দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ থাকে বেশি । শীতে বেশি কষ্ট পায় আশ্রয়হীন, শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষ ।শীত কেবল হীমশীতল বিবর্ণ ঋতু নয় ।শীতকালের প্রকৃতি নানারকম শাকসবজির সম্ভার নিয়ে আসে । গ্রামবাংলায় এ সময় খেজুর রস ও পিঠা –পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায় ।
বসন্ত :
বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ ।শীতের রুক্ষ,বিবর্ণ দিন পেরিয়ে বসন্ত আসে বর্ণিল ফুলের সম্ভার নিয়ে।বাংলার নিসর্গলোক এ সময় এক নতুনসাজে সজ্জিত হয়।পুষ্প ও পল্লবে ছেয়ে যায় বৃক্ষশাখা, গাছে গাছে আমের মুকুল আর ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যায়। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আর কোকিলের কুহুতান বসন্তের এক অপরূপ মার্ধুয সৃষ্টি করে ।
উপসংহার:
বাংলাদেশ বিচিত্র সৌন্দর্যের লীলাভুমি ।ঋতু পরিক্রমায় এখানে দেখা যায় বৈচিত্রময় রূপ । গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতি, বর্ষার জলসিক্ত জীবন,শরতের কাশফুল,হেমন্তের নবান্নের উৎসব,শীতের কুয়াশামাখা সকাল আর বসন্তের পুষ্প–পল্লব ষড়ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ বাংলাদেশকে করেছে বিচিত্ররূপণী।প্রকৃতির এমন বৈচিত্রময় রূপ পৃথিবীর আর কোথাওকি আছে ?