গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-06)

 

 #অচেনা ভালোবাসা

[পর্ব - ৬]
লেখক - আবির চৌধুরী 
 
দেখতে দেখতে দুদিন পার হয়ে গেলো। এই দুদিনে নুপুর আমার অনেক খেয়াল রাখছে। সব সময় আমার পাশেই বসেই ছিল। আমার খাওয়া দাওয়া সব নিজের হাতেই খাইয়ে দিয়েছে৷ আমি এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ। আন্টি আমাকে দেখতে আসছে।
আন্টি -- কেমন আছো বাবা? 
 
আমি -- জ্বী আন্টি এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি৷
আন্টি -- ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। ডাক্তার বলছে তুমি এখন অনেক সুস্থ। তোমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে।
আন্টি এসব বলছে তখন হঠাৎ করে ডাক্তার ভিতরে চলে আসলো।
ডাক্তার -- আপনি এখন অনেকটাই সুস্থ। এবার বাসায় চলে যেতে পারেন। তবে সাবধানে থাকবেন আরো কয়েক দিন। 
 
আমি মাথা নাড়ালাম।
ডাক্তার আবার বলে উঠল -- আপনি এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন আমি ভাবতেও পারি নাই৷ যা হইছে সব নুপুরের জন্য হইছে। সব সময় তোমার কেয়ার করছে৷ একটু পর পর এসে এসে আমাকে বিরক্ত করছে। 
 
ডাক্তারের কথা শুনে আমি নুপুরের দিকে তাকালাম। আমার চোখে চোখ পড়তেই মেয়েটা লজ্জা পেয়ে গেলো। ডাক্তার আরো কিছু কথা বলে চলে গেলেন। এবার আমি উঠে বসলাম। তারপর নিচে নেমে হাটতে যাবো তখনই আন্টি বলল -
-- আরে তুমি কই যাও এই অবস্থায়?
-- ডাক্তার বলছে আমি তো এখন সুস্থ। তো আর এখানে থেকে কি করবো তাই চলে যাচ্ছি।
-- তুমি কোথায় যাবে শুনি? 
 
-- জানিনা কোথায় যাবো, তবে কিছু একটা তো করতে হবে।
নুপুর -- এই আপনাকে কোথাও যেতে হবে না আমাদের বাসায় চলুন। আপনি এখন থেকে আমাদের বাসায় থাকবেন।
আন্টি -- ঠিক বলছ মা। ওকে নিয়ে আমাদের বাসায় যাবো।
আমি - কিন্তু আন্টি!
 
আন্টি -- কোনো কিন্তু না, আর তুমি এখনও পুরোপুরি সুস্থ না। আর কোনো কথা বলবেনা তুমি আমসদের সাথে আমাদের বাসায় যাবে। নুপুর তুই ওঁকে নিয়ে বের হ আমি ডাক্তারের সব বিল মিটিয়ে দিয়ে আসছি। বাহিরে গাড়ি দাড় করিয়ে আসছি।
আমি -- আন্টি আমার জন্য এমনি আপনাদের অনেক সমস্যা হইছে৷ আমি আর আপনাদের সমস্যা বাড়াতে চাইনা।
আন্টি -- আমি যেটা বলছি সেটাই হবে। নুপুর তুই অকে নিয়ে গাড়িতে বসা যা।
নুপুর -- জ্বী আম্মু ঠিক আছে। 
 
তারপর আন্টি আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে আমার কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। আমিও আর কিছু না বলে নুপুরের সাথে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পরে আন্টি বের হয়ে আসলো। আসে পাশে তো গাড়ির ড্রাইভার কে দেখতে পাচ্ছিনা। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।
নুপুর -- কি হইছে আপনার? এদিক ওদিক কি দেখেন?
আমি -- আসলে গাড়ির ড্রাইভার কে দেখতে পাচ্ছিনা। আন্টি তো চলে আসছে ড্রাইভার কই গেছে?
নুপুর আমার কথা শুনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল -- এই গাড়ির ড্রাইভার আমার আম্মু। আর এটা আমাদের গাড়ি। এই গাড়ি আম্মু ছাড়া আর কেউ ইউস করে না। এটা আমার আব্বুর প্রিয় গাড়ি ছিল।
আমি -- ওহ আচ্ছা। 
 
তারপর আন্টি ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে শুরু কিরে দিলেন। কিছুক্ষণ পরে একটা বড় বাড়ির সামনে এসে গাড়ি দাড়ালো। বাড়িটা অনেক বড় আর খুব সুন্দর। তারপর সবার সাথে আমি বাসায় গিয়ে ঢুকলাম।
আন্টি -- নুপুর তোর পাসের রুমটাতে ওঁকে থাকতে দিবি৷ যা এখন ওকে নিয়ে ওর রুমে যা ওর রেস্ট এর দরকার এখন।
নুপুর -- ঠিজ আছে আম্মু।
তারপর নুপুর আমাকে নিয়ে একটা রুমে চলে গেলো। রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো আছে খুব ভালোই লাগছে রুম টা। 
 
নুপুর -- রুম পছন্দ হইছে আপনার?
-- জ্বী খুব সুন্দর রুমটা।
-- ঠিক আছে আপনি এখন রেস্ট নেন। আর আমি পাশের রুমে আছি কোনো দরকার হলে আমাকে ডাকবেন ঠিক আছে?
-- আচ্ছা ঠিক আছে।
 
তারপর নুপুর চলে গেলো রুম থেকে বের হয়ে। আমি গিয়ে খাটের উপরে বসে রুমের চারপাশ দেখছি। হঠাৎ করে ছেলে টা আমার রুমে আসলো। যাকে আমি বাচিয়েছি।
-- কেমন আছো ভাইয়া তুমি?
-- এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
-- আমিও ভালো। আচ্ছা নাম কি তোমার?
-- জাহিদ, তোমার নাম কি? 
 
-- আমার নাম বাধন, আম্মু ডাকে বাদর বলে। আপু ডাকে সয়তান বলে। আর আমার গফ ডাকে জান বলে। এবার তুমি আমাকে যে কোনো নামে ডাকতে পারো শুধু জান বাদে।
ওর গফ আছে শুনে আমার মুখে হাসি চলে আসলো এই টুকু একটা বাচ্চা ছেলের গফ আছে!
আমি -- আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে বাধন বলেই ডাকবো। আচ্ছা কোন ক্লাসে পড় তুমি?
-- আমি ক্লাস ফাইবে পড়ি। 
 
-- আর তোমার গফ কোন ক্লাসে পড়ে?
-- সে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। আমাদের পাশের বাসাতেই থাকে। তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো কেমন?
আমি নিজের হাসি আর ধরে রাখতে পারছিনা। তাও অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম - ঠিক আছে পরিচয় করিয়ে দিয়।
-- আচ্ছা তোমার গফ নাই? 
 
-- আমার গফ নাই, আমি তো তোমার মতো এতো কিউট না তাই।
-- কে বলছে এই কথা! তুমি তো অনেক সুন্দর। তোমাকে আমার খুব ভালো লাগছে ভাইয়া। তুমি আমার সাথে ক্রিকেট খেলবে?
বাধন আমার সাথে কথা বলছে এমন সময় নুপুর রুমে চলে আসলো।
নুপুর -- কিরে সয়তান তুই এখানে কি করিস?
-- ভাইয়ার সাথে কথা বলছি।
-- এখন নিজের রুমে যা আর পড়তে বস।
-- তুই যা আমি কথা বলছি দেখিস না?
-- যাবি রুম থেকে নাকি আম্মুকে ডাক দেব?
-- যাচ্ছি যাচ্ছি।
বাধন চলে যাওয়ার আগে আমার কানের কাছে নিসপিস করে বলল -- আমার আপুকে কিছু বলবেন না কিন্তু।
এই কতা বলেই দৌড়ে চলে গেলো।
নুপুর -- ও আপনাকে কি বলছে?
-- তেমন কিছুনা বাদ দেন। 
 
-- ঠিক আছে আপনি এখন রেস্ট নিন। দুপুরে ডাক দেব।
তারপর নুপুর চলে গেলো। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভেঙে গেলো নুপুরের ডাকে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম তারপর খাবার খেতে চলে গেলাম সবার সাথে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে বসে রইলাম। নুপুর ওষুধ নিয়ে আমার রুমে আসলো। নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিল। তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। দেখতে দেখতে আরো দুদিন কেটে গেলো। রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে বসে আছি। আজকে কেন জানি আব্বু আর আম্মুর কথা মনে পড়ছে। আম্মুর সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। তারা হয়তো ভালোই আছে আমাকে ছাড়া। মন খারাপ করে রুমে বসে আছি তখন নুপুর আমার রুমে আসলো। 
 
নুপুর -- এই যে মিস্টার কি করছেন আপনি?
-- কিছুনা।
-- মন খারাপ নাকি আপনার?
-- না, এমনি ভালো লাগছে না আমার।
-- শরীর খারাপ নাকি আপনার?
-- না, তেমন কিছুনা এমনি ভালো লাগছে না।
-- ওহ আচ্ছা বাদ দিন, ছাদে যাবেন আকাশে আজকে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে। গেলে ভালো লাগবে আপনার। 
 
-- ঠিক আছে চলুন।
তারপর আমি নুপুরের সাথে ছাদে চলে গেলাম। তারপর গিয়ে ছাদের এক কোণে গিয়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। আমি অপলকভাবে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি। চাঁদ আমার এমনি আগে থেকেই খুব ভালো লাগে। 
 
নুপুর -- চাঁদ আপনার কাছে কেমন লাগে?
-- খুব ভালো লাগে। এমনও রাত গেছে আমি চাঁদ দেখে কাটিয়ে দিয়েছি।
-- ওহ, চাঁদ আপনার খুব ভালো লাগে?
-- হুম।
-- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-- জ্বী করুন। 
 
-- আচ্ছা আপনি কি কাওকে কখনও ভালোবেসে ছিলেন?
নুপুরের কথা টা শুনে আমার তিশার কথা মনে পড়ে গেলো আর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। তিশার কথা ভাবতেও আমার অনেক খারাপ লাগে। কখনও ভাবি নাই তিশা আমার সাথে এমন করবে। আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বাড়ি ছাড়া করল। মা-বাবার থেকে ধুরে আমি আজ শুধু তিশার জন্য।
-- কি হলো চুপ হয়ে আছেন কেন? 
 
-- আমি কখনও কাওকে ভালোবাসিনি।
-- ওহ, কাওকে পছন্দ করতেন নাকি?
-- না, এসব বাদ দেন। আপনি কি কখনও কাওকে ভালোবেসে ছিলেন?
-- হুম।
-- গুড, সে কি এখনও আছে?
-- না, অনেক আগেই হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে।
-- কেন? 
 
-- আসলে সে আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি। সে ভালোবাসত আমার বাবার টাকা কে।
-- বুঝলাম না বিষয় টা!
-- অন্য একদিন বলব।
-- না আজকেই বলুন আমি শুনবো। আর নিজের মনের কথা নিজের কাছে চেপে না রেখে অন্য কারো সাথে তা শেয়ার করলে মনের কষ্ট অনেক টাই হালকা হয়৷
-- ঠিক আছে বলছি। 
 
চলবে ---------------------

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। রি-চেক করা হয়নি, বড় করেই দিলাম। হ্যাপি রিডিং।
 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url