গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-09)


#অচেনা ভালোবাসা
[পর্ব - ৯]
লেখক - আবির চৌধুরী
নুপুর আমাকে নিয়ে ক্যানটিনে চলে গেলো। তারপর নুপুর তার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করল। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের সামনে খাবার চলে আসলো। তারপর সব ক্লাস শেষ করে আমি আর নুপুর বাসায় চলে গেলাম। এই ভাবে কেটে গেলো অনেক দিন। নুপুরের কেয়ারিং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আমার কেন জানি মনে হয় ও আমাকে ভালোবেসে ফেলছে। আবার এটা ভুল ও হতে পারে। তবে আমার মনে হয় নুপুর কে সব সত্যি কথা বলে দেওয়া উচিৎ। কন্তু কি ভাবে বলব সব আমি বুঝতে পারছিনা। আজকে শরীর অনেক খারাপ লাগছে তাই ভাবছি আজকে আর ভার্সিটি যাবো না। তাই নিজের রুমে শুয়ে আছি। হঠাৎ করে নুপুর আমার রুমে আসলো। 
 
-- আজকে তুমি কি ভার্সিটি যাবে না জাহিদ?
-- না শরীর টা খুব খারাপ লাগছে তুমি চলে যাও।
-- আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর নুপুর চলে গেলো আমি আমার রুমে শুয়ে রইলাম। অন্য দিকে নুপুর ভার্সিটির গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতে নুপুরের সব বান্ধুবী নুপুরের দিকে এগিয়ে আসলো।
-- কিরে জাহিদ আসে নাই তুই আজ একা কেন?
-- জাহিদ খুব অসুস্থ তাই আজকে আসে নাই।
-- ওহ আচ্ছা, তোর সাথে আমাদের কিছু কথা আছে।
-- বল কি কথা? 
 
-- তুই কি জাহিদ কে ভালোবাসিস? আমাদের তো মনে হয় ভালোবাসিস।
-- তোরা কি ভাবে বুঝলি?
-- সেটা মানুষের হাবভাবে প্রকাশ পায়৷ যাইহোক তুই জাহিদকে তোর মনের কথা বলে দে না হলে সবাই যে ভাবে জাহিদের দিকে হুমরি খেয়ে পড়ে আছে কখন কি হয় বলা যায় না।
-- কিন্তু দোস্ত আমি ওকে ভালোবাসি কিন্তু ওঁকে বলার সাহস আমি পাচ্ছি না। হুম হয়তো ওর মনে এমন কিছু নাই। 
 
-- আরে জাহিদ ও তোকে ভালোবাসে দেখিস না তুই ছাড়া তেমন কারো সাথে কথা বলে না কোনো মেয়ে কে পাত্তা দেয় না।
-- কিন্তু,,,,,
-- কোনো কিন্তু না তুই কাল কে কলেজে সবার সামনে জাহিদ কে প্রপোজ করবি এটাই শেষ কথা আর আমরা সবাই তোর পাসে আছি৷
-- আমার খুব ভয় লাগছে।
-- কেন? কিসের এতো ভয় তোর জাকে ভালোবাসিস তাকে তোর মনের কথা বলতে পারবি না এটা কেমন কথা? 
 
-- আচ্ছা বাদ দে এখন ক্লাসে চল।
-- কালে যেনো কাজ হয় বলে দিলাম। না হলে তোর খবর আছে।
-- ঠিক আছে চল।
তারপর সবাই ক্লাসে চলে গেলো। সব ক্লাস শেষ করে নুপুর বাসায় চলে আসলো। জাহিদ এখনও নিজের রুমে শুয়ে আছে। নুপুর নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জাহিদের রুমে গেল।
-- জাহিদ শরীর কেমন আছে এখন? ওষুধ খেয়েছো?
-- হুম। আন্টি দিয়েছে। এখন অনেক ভালো লাগছে।
-- ওহ ঠিক আছে, খাবার খেয়েছো?
-- হুম, তুমি আসলে কখন? 
 
-- একটু আগেই আসলাম। আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি খাবার খেয়ে আসি।
তারপর নুপুর চলে গেলো। এই ভাবে আজকের দিন টা কেটে গেলো। পরের দিন সকালে জাহিদ আর নুপুর এক সাথে ভার্সিটিতে গেলো। তবে আজ নুপুর অন্য ভাবে সেজে এসেছে। খুব সুন্দর লাগছে নুপুর কে। এবার দুজনে গেট দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। আর নুপুরের বান্ধুবী রা এগিয়ে আসলো।
-- জাহিদ তোমার শরীর কেমন আছে এখন? তুমি নাকি অসুস্থ ছিলে।
-- হুম, কিন্তু তোমরা কি করে জানলে?
-- নুপুর বলছে আমাদের। নুপুর তো তোমাকে খুব চিন্তায় ছিল।
আমি এবার নুপুরের দিকে তাকিয়ে দেখি ও চুপচাপ হয়ে আছে। এবার আমি ক্লাসে চলে যাবো এমন সময় নুপুর আমাকে ডাক দিল।
 
নুপুর -- জাহিদ তোমাকে আমি কিছু বলতে চাই সবার সামনে।
আমি -- বল কি বলবে?
নুপুর -- আমি সোজা সাপটা কথা বলতে পছন্দ করি৷ ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলতে পারি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
নুপুরের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো৷ এতোদিন যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই হলো। এখন কি করবো আমি? কি করা উচিৎ আমার এখন? আমার মাথা কাজ করছেনা। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। 
 
আমার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বলল -- জাহিদ আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি। আমাকে ফিরিয়ে দিয় না। আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাস হয়তো তুমি বলতে পারছো না।
আমি -- এসব তুমি কি বলছ নুপুর?
নুপুর -- শুনতে পারছো না নাকি? আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি -- তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-- কি কথা?
-- এখানে না চলো তুমি আর আমি কোথাও গিয়ে বসি।
-- ঠিক আছে চলো। 
 
তারপর নুপুর কে নিয়ে একটা খালি যায়গায় চলে গেলাম। যেখানে মানুষ কম আছে।
নুপুর -- কি কথা বলো!
-- আসলে আমি তোমাদের সবাইকে মিথ্যে বলে আসছি এতো দিন।
-- কি মিথ্যে?
-- আমি আসলে এতিম না। আমার ও পরিবার আছে। আমার মা বাবা আর আমার স্ত্রী আছে। আমি বিবাহিত। 
 
আমার কথা টা শুনে নুপুরের সুন্দর মুখটা কালো আঁধারে ডেকে গেল। নুপুর চুপ হয়ে আছে।
আমি আবার বললাম -- নুপুর তুমি সত্যি অনেক ভালো একটা মেয়ে। আমি তোমাকে ঠোকাতে চাইনা। আমি তোমাকে অনেক আগেই সব বলতে ছেয়ে ছিলাম। কিন্তু কখনও বলার মতো সেই সময় আমি পাইনাই। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়।
আমি নুপুরের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি ওর চোখের পানি মুছে দেওয়ার সেই সাহস পাচ্ছিনা। আমিও মাথা নিছু করে দাড়িয়ে রইলাম৷
-- সবাইকে ছেড়ে তা হলে আপনি চট্টগ্রাম কেন চলে আসলেন?
-- শুনবে সব কিছু? 
 
-- হুম বলেন আমি শুনতে চাই সব কিছু।
তারপর আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছুই নুপুর কে বললাম। নুপুর আমার কথা শুনে আরো বেশি চোখের পানি ফেলছে। আমার চোখেও পানি চলে আসছে।
আমি -- আমি একটা মেয়ের জন্য আমার পরিবার ছেড়ে চলে আসছি৷ তোমরা যদি আমাকে আশ্রয় না দিতে আমি কই থাকতাম নিজেও জানতাম না। 
 
নুপুর -- আমার কিছু ভালো লাগছে না আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।
এই কথা বলে নুপুর নিজের চোখের পানি মুছে আমার সামনে থেকে চলে গেলো। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। কি করব বুঝতে পারছিনা আমি। আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম আর নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিনা। কিছুক্ষণ বসে থেকে আমি বাসার দিকে চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। রুমে বসে রইলাম। দেখতে দেখতে আজকের দিন টা কেটে গেলো।
 
 সারাদিন নুপুর আমার সাথে একটা কথাও বলে নাই। আমার সাথে দেখাও করে নাই। মনে হয় আমি মেয়েটাকে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছি। নুপুরের জন্য খুব খারাপ লাগছে। রাতে খাবার না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে চোখ খুলে দেখি নুপুর আমার জন্য চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নুপুরের চোখ ফুলে আছে। আবার চোখের নিচে কালো দাগ বসে আছে৷ দেখেই বুঝতে পারছি মেয়েটা সারারাত ঘুমায় নি।
আমি -- তুমি কখন আসলে? 
 
-- অনেক্ষন আগে এসেছি৷ এসে দেখলাম তুমি ঘুমাচ্ছ তাই আর ডাক দেয়নি। এখন ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে নাও৷ আর হ্যাঁ কালকের জন্য সরি।
-- সরি কেন আবার?
-- কালকে এই ভাবে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। 
 
চলবে -------------------------

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url