গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-10)

 


#অচেনা ভালোবাসা
[পর্ব - ১০]
লেখক - আবির চৌধুরী
আমি নুপুরকে বললাম -- ঠিক আছে সমস্যা নাই আমি কিছু মনে করি নাই। তোমার চোখ মুখ ফুলে আছে কেন এমন?
-- এমনি বাদ দাও আসো নাস্তা করবে৷ ফ্রেশ হয়ে নাও তাড়াতাড়ি।
-- ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি৷ 
 
তারপর নুপুর চলে গেলো। আমিও ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম নাস্তা খেয়ে আমি আর নুপুর ভার্সিটির দিকে রওনা দিলাম। তবে আজকে আগের সেই বাচাল নুপুর কে খুঁজে পাচ্ছিনা। যে মেয়েটা সব সময় বকবক করতো সেই মেয়েটা আজকে চুপ হয়ে আছে। কেন জানি চুপ হয়ে থাকাটা আমার ভালো লাগছে না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে৷ আমিও চুপ হয়ে রইলাম।
 
 কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ভার্সিটিতে পৌছে গেলাম। তারপর আমরা ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাসে গিয়ে চুপ হয়ে বসে আছি। পাশে তাকিয়ে দেখি নুপুর ও চুপচাপ হয়ে বসে আছে৷ আর তার বান্ধুবীরা কথা বলছে৷
নুপুরের বান্ধুবী বলল -- কিরে নুপুর তুই এমন চুপ হয়ে আছিস কেন? কি হইছে তোর মন খারাপ কেন? জাহিদ তোকে এক্সিপ্ট করে নাই নাকি? 
 
নুপুর কিছু না বলে চুপ হয়ে রইল।
নুপুরের বান্ধুবী আবার বলল -- আরে কি হইছে বলবি তো। ঠিক আছে বুঝতে পারছি।
নুপুর -- কি বুঝতে পারলি?
-- কিছু না, তোকে জানতে হবে না। 
 
এবার ওরা সবাই উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসল।
-- জাহিদ তোমার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে একটু বাহিরে আসবে?
তারপর আমি ঠিক আছে বলে ওদের সাথে বের হয়ে গেলাম।
-- দেখো জাহিদ, নুপুর তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে তুমি ওঁকে ফিরিয়ে দিয় না।
-- নুপুর সত্যি অনেক ভালো মেয়ে। কিন্তু আমার পক্ষে কোনো কিছু সম্ভব না। আমি আমার বেপারে নুপুর কে সব বলছি। 
 
-- কি বলছো?
-- সেটা ওর থেকে জেনে নিলে ভালো হিবে।
তারপর ওরা চলে গেলো। আমি বাহিরে বসে রইলাম। ওরা নুপুরের কাছে গেল।
-- নুপুর কি হইছে আমাদের সব বল। জাহিদ বলছে তোর থেকে জেনে নিতে৷
তারপর নুপুর সবাইকে সব টা বলল।  সবাই কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো। সবাই অনেক্ষন চুপ হয়ে রইল। 
 
-- জাহিদ ভালো ছেলে তাই তোকে সত্যি কথাটা বলে দিছে৷ কিছু তো আর করার নাই। এখন আর কি করবি জাহিদ কে তুই ভুলে যা নুপুর।
নুপুর -- আমি ওকে কি করে ভুলবো! ও যে আমার পুরো হৃদয় জুড়ে আছে। আমি তো ওকে ভুলে থাকতে পারছিনা।
এই কথা বলেই নুপুর কান্না করে দিল। 
 
অন্য দিকে আমি একটা গাছের নিচে বসে রইলাম। কি করবো বুঝতে পারছিনা। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসছি আজকে ৬ মাস হয়ে গেলো। একটি বার আমার মা বাবা আমার খোঁজ নেয় নি। তারা আমাকে ভুলেই গেছে৷ আর তিশা তিশার জন্য আমার মনে আর কোনো ভালোবাসা নেই। আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। আমি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে একটা সিগারেট নিয়ে টানা শুরু করে দিলাম। সিগারেট খেলে নাকি কষ্ট অনেক কমে যায়৷ সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে সব কষ্ট উড়িয়ে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পরে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে  সোফায় বসে আছি মন খারাপ করে। এটা দেখে আন্টি আমার দিকে এগিয়ে আসল।
 
-- জাহিদ কি হইছে তোমার মন খারাপ নাকি?
-- না আন্টি আমি তো ঠিক আছি।
-- নুপুর কই তুমি চলে এলে ও আসে নাইজে?
-- আমার শরীর একটু খারাপ লাগছে তাই আমি চলে আসছি।
 
তারপর আন্টি আরো কিছু কথা বলে চলে গেলো। আমি আমার রুমে চলে গেলাম। দেখতে দেখতে আরো তিন দিন কেটে গেলো। নুপুর এখন আমার সাথে ঠিক করে কথা বলে না। দরকার ছাড়া কোনো কথা বলে না। নুপুর অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের নুপুর কে খুব মিস করছি। যে মেয়ের বকবক থেকে দূরে থাকতাম এখন সেই বকবক গুলো মিস করছি খুব। নুপুর আমার মনে অনেকটা যায়গা নিয়ে নিয়েছে৷ শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছি হঠাৎ করে আন্টি আমার রুমে আসল। 
 
-- জাহিদ কি শুনলাম এসব? 
 
আন্টির কথা শুনে আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম।
কাপা কাপা গলায় আন্টি কে বললাম - কি হইছে আন্টি?
আন্টি -- আমি কখনও ভাবতে পারি নাই তুমি আমার কাছে এত বড় একটা কথা লোকাবে এটা আমি আশা করি নাই। 
 
আমি আন্টির কথা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি বুঝতে পারছিনা আন্টি কি বলছে আমাকে। তাই আন্টিকে আবার বললাম - আন্টি আমি কি করলাম সেটা তো আমাকে বলেন।
-- নুপুর তোমাকে ভালোবাসে কথাটা আমাকে বললে না কেন? আমাকে বললে কি আমি মেনে নিতাম না তোমাদের? তুমিও নুপুর কে ভালোবাসো তাই না? 
 
আমি আন্টির কথা শুনে আরো অবাক হয়ে গেলাম আন্টি এসব কি করে জানল? তা হলে নুপুর আন্টি কে বলে দিয়েছে?
আমি -- আন্টি কি বলছে এসব? আপনাকে এসব কে বলছে?
আন্টি এবার আমার হাত ধরে নুপুরের রুমের দিকে নিয়ে গেলো। নুপুরের রুমে ডুকতে আমার চোখ বেজে আসলো। নুপুরের কি অবস্থা হলো। 
 
-- দেখো নুপুরের কি অবস্থা হলো এটা? আর ও বার বার তোমার নাম নিচ্ছে। আমার মেয়েটাকে তুমি বাচাও বাবা। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাচব বলতে পারো তুমি? তোমাদের মাঝে কি হয়েছে আমি জানি না। 
 
আন্টি এসব বলছে আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি আন্টির দিকে তাকাতে পারছিনা। নুপুর খাটের উপরে শুয়ে আছে অচেতন অবস্থায়। আমি নুপুরের দিকে এগিয়ে গেলাম। মেয়ে টা না খেয়ে অনেক শুখিয়ে গেছে। সুন্দর চেহারা টা কালো হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ বসে গেছে।
 
 এই সব কিছু আমার জন্য হয়েছে। আমি মেয়েটার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখ দিয়ে পানি নামতে শুরু করে দিল। আমি গিয়ে নুপুরের মাথার পাশে বসলাম। আর ওর মাথায় হাত রাখতে নুপুর নিজের চোখ খুলে আমার দিকে তাকালো আর চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিল।
আমি নুপুর কে বললাম -- এমন করছো কেন তুমি নুপুর? নিজের সুন্দর জীবন টা কেন আমার জন্য নষ্ট করছো তুমি? 
 
নুপুর কিছু না বলে কান্না করেই যাচ্ছে।
-- তোমাকে এই ভাবে দেখতে আমার ভালো লাগছে না । আমি আগের নুপুর কে দেখতে চাই।
নুপুর কান্না,করেই যাচ্ছে। কিছু বলছেনা নুপুরের কান্না দেখে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা। উঠে নিজের রুমে চলে আসলাম। রুমে বসে বসে চোখের পানি পেলছি।
 
 আমার জীবনটা কি এই ভাবে কেটে যাবে? আমার জীবনে কি কখনও সুখ আসবেনা! কেন আমার সাথে এমন হয়? কেনো আমি কারো ভালোবাসা বুঝতে পারিনা। মেয়েটা আমার জন্য কতটা কষ্ট পাচ্ছে। আমার জন্য তো সব সময় খারাপ হয়। আমার জন্য আমার মা-বাবা মানুষের সামনে যেতে পারেনা। আমি কি এমন অপরাধ করেছি যার জন্য আমার সাথে এমন হচ্ছে। এসব ভাবছি আর আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
 
 এমন সময় আমার রুমে কারো আসার শব্দ শুনে চোখের পানি মুছে তাকিয়ে দেখি আন্টি আসছে।
-- জাহিদ কি হইছে আমাকে একটু বলবে তুমি বাবা? নুপুর কি তোমাকে ভালোবাসে?
আমি কিছুনা বলে চুপ হয়ে রইলাম।
আন্টি আবার বলল -- তুমি নুপুর কে ভালোবাসো না তাই না? আমি মা হয়ে তোমার কাছে অনুরোধ করছি আমার মেয়েকে তুমি ঠিক করে দাও বাবা। আর তুমি ওকে গ্রহণ করো আমি তোমাদের বিয়ে দিয়ে দেবো কিছুদিনের মধ্যে। 
 
আমি -- আন্টি এটা কি করে হয় বলুন তো?
-- কি করে হয় মানে কি? তুমি খুব ভালোছেলে আমার কোনো আপত্তি নেই৷
-- আন্টি আমার কিছু কথা আছে৷ কথাটা শুনলে হয়তো আপনি আমাকে অনেক খারাপ মনে করবেন৷ আসলে আমি কোনো ভালো ছেলে না।
-- কি বলছ এসব তুমি? সব খুলে বলো! 
 
-- আন্টি আমি একজন ধর্ষক, আর কোনো মা চাইবে না তার মেয়েকে একটা ধর্ষকের হাতে তুলে দিতে।
-- আমি এসব বিশ্বাস করিনা। যে ছেলে অন্য কাওকে বাচাতে গিয়ে নিজের জীবনের কথা ভাবে না আর যাই হোক সেই ছেলে কখনও ধর্ষক হতে পারেনা। 
 
-- আর সব থেকে বড় কথা আমার পরিবার আছে আমি বিবাহিত। আমি আপনাদের প্রথমে মিথ্যে কথা বলেছি। কারণ আমি তাদের পরিচয়ে আর বাচতে চাইনি।
-- তুমি আমাকে সব টা খুলে বল জাহিদ। 
 
চলবে ------------------------------

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url