গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-11)

  

#অচেনা ভালোবাসা

[পর্ব - ১১]
লেখক - আবির চৌধুরী 
 
তারপর আমি আন্টি কে সব বলতে শুরু করে দিলাম। আমার সব কিচু আন্টি কে বললাম। আমার সাথে যা যা হয়েছে সব। আন্টি আমার কথা শুনে অনার চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেল।
আন্টি -- এখন তুমি কি করবে বাবা? 
 
আমি -- আন্টি আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। নুপুর আমাকে ভালোবাসে। আমিও হয়তো নুপুর কে ভালোবেসে ফেলছি। কারণ কিছুদিন ধরে আমার কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। আর আমার পক্ষে নুপুর কে বিয়ে করা সম্ভব না আমি এখনও আমার আগের স্ত্রী কে ডিভোর্স দি নাই।
আন্টি -- আচ্ছা বাবা তুমি থাকো আমি আসছি। আমার একটু কাজ আছে। 
 
তারপর আন্টি চলে গেলো। আমি আমার রুমে শুয়ে আছি। ফোন বের করে আমার বন্ধু রাসেল কে একটা ফোন দিলাম।
রাসেল -- আচ্ছালামুয়ালাইকুম, কে বলছেন?
-- ওয়ালাইকুম সালাম। আমি জাহিদ। 
 
-- আরে তুই এতো দিন পরে? এতো দিন একটা বার ও খোজ নিলি না! তোর নাম্বারে আমি কতো কল দিছি কিন্তু ফোন নন্ধু দেখায় সব সময়।
-- আছি আমি। আমার মা বাবা কেমন আছে?
-- ভালো নেই তারা।
-- কেন কি হইছে?
-- তুই চলে যাওয়ার ২ মাস পরে তিশা সব বলে দিছে সবাইকে। 
 
-- মানে?
-- তুই ঢাকা চলে আয় সব জানতে পারবি। আর তোর মা বাবা তোকে না পেয়ে পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে ফিরে আয় তুই।
-- হুম আমি তো ফিরে আসবো। ফিরে আসতে তো আমাকে হবেই। আচ্ছা আমি কালকেই আসছি। দেখা হবে ফোন রাখলাম।
তারপর আমি ফোন রেখে দিয়ে আন্টির রুমে গেলাম।
আন্টি -- কিছু বলবে নাকি বাবা? 
 
-- জ্বী আন্টি আমি কাল ঢাকা যাবো।
-- কেন বাবা আমাদের এখানে আর ভালো লাগছে না? আমরা কি এখন পর হয়ে গেছি?
-- আন্টি আমি একে বারে যাচ্ছি না আমি তো আবার ফিরে আসবো। শুধু কিছু মানুষ কে কিছু উত্তর দেওয়া জন্য যাচ্ছি। আর আসল কারণ আমি তিশা কে ডিভোর্স দিয়ে আসবো। তারপর আমি নুপুর কে বিয়ে করবো৷ 
 
আন্টি আমার কথা শুনে অনেকটা খুশি হয়ে গেলো।
আমি -- আন্টি আমি ওখান থেকে এসে আপনাদের সব বলব।
তারপর আমি আন্টির রুম থেকে বেরিয়ে নুপুরের রুমে গেলাম। দেখি নুপুর শুয়ে আছে। ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ওর কপাল একটা চুম্বন একে দিলাম। আমার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে নুপুর তাকাল আমার দিকে।
আমি -- নুপুর আমি কাল ঢাকা চলে যাবো। দুই দিন পরে আবার ফিরে আসবো। নিজের খেয়াল রাখবে। আর তখন যে কথা বলতে পারি নি এখন সেই কথা বলছি। 
 
তারপর আমি নুপুর কানের কাছে গিয়ে কানে কানে বললাম i love you আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
নুপুর আমার কথা শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। তবে এই কান্না কষ্টে না সুখের। এই ভাবে কিছুক্ষণ আমারা দুজন দু'জন কে জড়িয়ে ধরে রইলাম। তারপর নুপুর কে বলে ওর রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। 
 
পরের দিন সকালে সবাইকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে গিয়ে একটা ট্রেনে উঠে ঢাকা পৌছে গেলাম। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে রাসেল কে ফোন দিয়ে বলছি এখানে আসার জন্য। আমি ট্রেন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছি রাসেলের অপেক্ষায়।
 
 কিছুক্ষণ পরে রাসেল কে দেখতে পেয়ে ওর দিকে এগিয়ে গিলাম। রাসেল আমার সামে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও জড়িয়ে ধরলাম। তারপর রাসেল কে নিয়ে বাসার দিকে চলে গেলাম৷ বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতে আম্মু এসে দরজা খুলে দিল৷ আম্মু আমাকে দেখে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। তবে আজকে আর আমার চোখে কোনো পানি নেই। 
 
আম্মু -- বাবা তুই এতোদিন আমাদের ছেড়ে কই ছিলি? তোকে কতো যায়গায় খোঁজ করছি পাইনি তোর কোনো খোঁজ।
আমি -- তোমরাই তো আমাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলে। আমি তোমাদের এতো অবহেলা মেনে নিতে পারছিলাম না।
এবার রুম থেকে বাবা বের হয়ে আসলো। বাবা আমাকে দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসল আর আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। 
 
-- জাহিদ তুই এতো দিন কোথায় চিলি বাবা? আয় এখানে বস।
তারপর আমি গিয়ে আব্বুর পাশে বসলাম। কিছুক্ষণ পরে তিশা বের হয়ে এসে আচমকা আমার পায়ে এসে পড়ল।
তিশা -- আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও জাহিদ। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করছি৷ তোমার ভালোবাসা আমি বুঝতে পারি নাই। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললাম -- আব্বু এই মেয়ে কে আমার সামনে থেকে চলে যেতে বল আর কিছুক্ষণের মধ্যে ডিভোর্স পেপার চলে আসবে। আর হ্যা আমি এখানে থাকতে আসি নাই আমি আবার চলে যাবো। 
 
আব্বু -- তুই কোথায় যাবি আবার? তুই আমাদের সাথেই থাকবি। আমাদের উপরে আর অভিমানে করে থাকিস না আমাদের ক্ষমা করে দে তুই৷
আমি -- আমাকে আর কতো অপরাধী বানাবেন আপনারা সবাই? আপনাদের উপরে আমার কোনো রাগ নেই।
 
আব্বু -- তুই আর তিশা নতুন করে সব কিছু শুরু কর তিশা নিজের ভুল বুঝতে পারছে। তুই ওঁকে ক্ষমা করে দে।
-- আমি জানতে চাই কেন আমার সাথে এমন করছে? আমার কি অপরাধ ছিল?
আব্বু - তিশা তুই জাহিদ কে সব বল। 
 
তিশা কান্না মাখা গলায় আমাকে সব বলতে শুরু করে দিল-- জাহিদ আমি তোমাকে অনেক আগে থেকে হিংসা করতাম। তুমি সব কিছুতেই আমার থেকে এগিয়ে ছিলে। তুমি যখন আমাকে প্রপোজ করতে তখন তুমি জানতে না আমার অন্য একটা ছেলের সাথে আমার রিলেশন ছিল। আর সেই ছেলেকে তুমি চিনতে। ওর সাথে তোমার অনেক বার ঝামেলা হইছে। আর ওই ছেলেটা নিহান ছিল। নিহান আমাকে বলছে এসব করতে তোমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে।
 
কিন্তু আমি জানতাম না এতো কিছু হয়ে যাবে৷ আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে। আমাদের বিয়ের আগে আমি নিহান কে জানাই। নিহান আমাকে বলছে বিয়েতে রাজি হতে। তুমি চলে যাওয়ার পরে আমি জানতে পারি নিহান এর আরো অনেক যায়গায় রিলেশন আছে৷ অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন করে। হঠাৎ একদিন রাতে নিহান তার কাছে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর সে আমার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হতে ছেয়েছে। আমি তাকে বাদা দিলাম। ওর গায়ে হাত তুল্লাম তারপর ও আমাকে বলে ও নাকি আমাকে ভোগ করার জন্য আর তোমাকে সায়েস্তা করার জন্য আমার সাথে রিলেশন করছে।
তিশা কথা গুলা বলে আমার পায়ের উপরে আবার পড়ে গিয়েছে৷ 
 
তিশা -- আমি জানি আমার এই অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই তার পরেও বলছি আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও জাহিদ।
তারপর আমি তিশাকে দার করালাম।
আমি -- ঠিক আছে আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম৷
কিছুক্ষণ পরে রাসেল ডিভোর্স পেপার নিয়ে চলে আসল। আমি আমার সিগনেচার দিয়ে তিশার দিকে এগিয়ে দিলাম। 
 
তিশা -- এটা কি?
-- ডিভোর্স পেপার। আমি সিগনেচার করে দিয়েছি এবার আপনি আপনার সিগনেচার করে দিন। আর আমাদের মাঝে বিয়ে নামক মিথ্যে বন্ধন টা আর থাকবে না।
তিশা হয়তো এমন টা আসা করে নি। আমার মা বাবাও করে নাই। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইল অবাক চাহুনিতে। 
 
চলবে ------------------------------

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url