গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা (শেষ পর্ব) | Story :: Ochena Valobasha (Part-12 Full & Final)
#অচেনা ভালোবাসা
[ ১২ ও শেষ পর্ব]
লেখক -- আবির চৌধুরী
সবাই আমার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে আছে৷ হয়তো এমন টা কেউ আশা করে নি।
তিশা -- জাহিদ তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারো নি তা হলে?
-- ক্ষমা তো আমি করেই দিয়েছে আগেই।
-- তা হলে এসব কি?
-- যেটা দেখতে পাচ্ছেন সেটাই।
আব্বু বলল -- জাহিদ কি করছিস এসব? তুই তিশাকে মেনে নে।
আমি -- সরি আমি এই কথা রাখতে পারলাম না। আমি তিশা কে মেনে নিতে পারব। আগে আমার হারিয়ে যাওয়া অতীত ফিরিয়ে দিতে বলেন। আমি ওর জন্য আমার মা বাবার কাছে অবহেলিত হয়ে ছিলাম৷ সবার সামনে আমাকে খারাপ বানিয়েছে। এই সব ফিরিয়ে দিতে বলুন৷ ওর জন্য আমি আমার মা বাবাকে ছেড়ে দূরে থাকিতে হয়েছে৷ আমার জীবন থেকে সব হাসি খুশি কেড়ে নিয়েছে সেসব ফিরিয়ে দিতে বলুন৷ যদি সেই সব ফিরিয়ে দিতে পারে তো আমি তাকে মেনে নেবো নয়তো না।
তিশা মাথা নিছু করে দাড়িয়ে আছে। আব্বু আবার বলল - আমাদের কোনো কথার দাম কি তোর কাছে নেই?
আমি -- দাম ছিল কোনো এক সময় এখন আর নেই। আপনাদের আমি কতোবার বলেছি আমি কিছু করি নাই তখন তো কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেন নাই। আআপনাদের জন্য আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর হ্যাঁ শুনেন। আমি অন্য একটা মেয়ে কে ভালো বাসি৷ আর সেই মেয়েকে আমি বিয়ে করব। আপনার আমাকে পর করে দেওয়ার পরে ওই মেয়ে টা আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করবো। আপনার যদি মেনে নেন তো ভালো মেনে না নিলে আমার কিছুই করার নেই।
আব্বু -- তুই এখন অনেক বেড়ে গেছিস আমার কথার কোনো মূল্য তুই দিলিনা। তুই আর কখনও এই বাড়িতে ফিরে আসবিনা।
আমি -- ঠিক আছে আমি আর এই বাড়িতে ফিরে আসবনা আমি যেই জন্য আসছি আমার সেই কাজ হয়ে গেছে৷ আসি আল্লাহ হাফেজ আপনারা ভালো থাকবেন৷
এই বলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাবো তখন আম্মু আমার সামনে চলে আসল।
আম্মু -- তুই অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছিস, তুই তো আগে এমন ছিলি না!
আমি -- তোমরা আমাকে বাধ্য করেছো একন পরিবর্তন হতে। যাইহোক আমি আর এই বাড়িতে কোনো দিন ফিরে আসবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিয়। আমি তোমাদের অনেক অবহেলা সহ্য করেছি আমি আর পারবোনা।
তিশা এসে আবার আমার পায়ের উপরে পড়ে কান্না করে দিয়ে বলছে -- আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না? আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে ফেলছি। তুমি যখন আমার পাশে ছিলে তখন আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। তুমি যখন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে তোমার শূন্যতা আমি টের পেয়েছি।
তিশার কথা শুনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ভালোবাস! আরে ভালোবাসার আপনি কি বোঝেন? আমি আপনাকে ভালোবাসি কথাটা অনেক বার বলেছি আপনি সব সময় আমার ভালোবাসা নিয়ে মজা করছেন। হাসি তামাশা করছে আমাকে বার বার অপামান করছেন। ভালোবাসা টা আপনার মুখে মানায় না। আর কি বলছেন ক্ষমা! আপনাদের মতো মেয়েরা কখনও ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না। আপনাদের তো কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিৎ। আপনাদের মতো কিছু নিচু মনের মানুষের জন্য অনেক ছেলে ঘরবাড়ি ছাড়া। একটা বার কি ভেবে দেখেছেন যার নামে আপনি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন তার কি হবে? সেটা ভাব্বেন কেন আপনারা তো চান এটাই হোক ছেলেটা মরে যাক।
তিশা আমার কথা শুনে কিছু বলতে পারছেনা শুধু চোখ দিয়ে পানি পেলছে। আজকে সত্যি খুব ভালো লাগছে৷ নিজে ভিতরে জমে রাখা কথা গুলা আজকে বলতে পারলাম। তারপর আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। পিছন থেকে আম্মু অনেক বার ডাকছে তার দিকে নজর না দিয়ে আমি বেরিয়ে গেলাম। বাসা থেকে বের হয়ে সোজা ট্রেন স্টেশনে চলে গেলাম। তারপর ট্রেন ধরে চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ৪ঘন্টা পরে চট্রগ্রাম পৌছে গেলাম। ট্রেন স্টেশনের থেকে বের হয়ে আমি বাসায় চলে গেলাম। বাসায় ঢুকে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতে আন্টি এসে দরজা খুলে দিল।
আন্টি -- বাবা তুমি না দুই দিন থাকো হঠাৎ করে আজকেই চলে আসলে যে? ওখানে কি কোনো সমস্যা হইছে তোমার?
-- জ্বী আন্টি আমি চলে আসলাম আর কখনও আমি ওই বাড়িতে যাবো না।
-- কি হইছে বাবা আমাকে বল তুমি।
-- আন্টি আমি খুব ক্লান্ত আমার একটু রেস্ট করা দরকার। পরে সব বলব।
-- আচ্ছা তুমি কি খাবার খেয়ে এসেছো?
-- হুম খেয়ে আসছি।
-- আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও তা হলে।
তারপর আমি সোজা আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে খাটের উপরে শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধু করতেই আমার চোখ ঘুম নেমে আসলো।শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে তাই সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা ৭টা বাজে। ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে নিজের রুমে বসে রইলাম। আজকে কেন জানি একটা অজানা ভালো লাগা কাজ করছে আমার ভিতরে। হঠাৎ করে আমার রুমে নুপুর আর আন্টির আগমন ঘটে।
আন্টি -- তুমি কি ফ্রী আছো?
আমি -- জ্বী আন্টি।
-- তা হলে এবার বলো ওখানে কি হইছে?
আমি আন্টি কে আর নুপুর কে সব বললাম। আন্টি আমার কথা শুনে আমাকে বলল -- দেখো বাবা মা-বাবা কে ছেড়ে এ ভাবে চলে আসা ঠিক হয়নি তোমার।
-- আন্টি আমার মা বাবা আমার কথা বিশ্বাস না করে অন্য একটা মেয়ের কথা বিশ্বাস করছে। দিনের পর দিন আমি অবহেলার শিকার হয়েছি।
-- আমার আর কিছু বলার নাই বাবা।
-- আন্টি আমি একটা কথা বলতে চাই।
-- কি কথা?
-- আমি নুপুর কে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই। আপনার যদি আপত্তি না থাকে তো।
আমার কথা শুনে আন্টি অনেক টাই খুশি হয়ে গেছে৷ আমি নুপুরের দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। লজ্জা লাল হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আন্টি -- তোমার মা-বাবা কি মেনে নিবে?
আমি -- আন্টি বিয়েটা আমি করব সো কে মিনে নবে না, না নিবে তাদের কথা ভেবে লাভ নাই। আপনার কোনো আপত্তি আছে সেটা বলুন?
-- না বাবা আমার কোনো আপত্তি নাই।
তারপর আন্টির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নিলাম। আর দুই দিন পরেই আমাদের বিয়ে। বিয়ের সব কিছুই ঠিকঠাক করা হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো। কাল আমাদের বিয়ে। হলুদ শেষ করে নিজের রুমে শুয়ে আছি হঠাৎ অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো। হঠাৎ করে এতো রাতে কে কল দিল বুঝতে পারছিনা। দেরি না করে কল রিসিভ করতেই আমি থমকে গেলাম। কারণ কল দিয়েছে আম্মু।
আম্মু -- তুই আমাদের এতোটা পর করে দিলি যে তুই বিয়ে করছিস অথচ আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলিনা।
আম্মু কান্না মাখা গলায় কথাটা বলল। আমি কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলাম।
আম্মু আবার বলল -- বাবা আমরা তোকে বিশ্বাস না করে ভুল করছি। যা হইছে ভুলে যা আর আমি আর তোর বাবা চট্রগ্রাম আসছি।
মায়ের কথা শুনে আমি সত্যি অনেক খুশি হয়ে গেলাম।
আম্মু আর আব্বুর সাথে অনেক্ষন কথা বললাম। সব কিছুই এখন ঠিকঠাক আছে। কথা শেষ করে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে আন্টিকে বললাম আব্বু আম্মুর কথা আন্টিও অনেক খুশি হয়ে গেল। আব্বু আম্মু সময় মতে চলে আসছে। সবার মত নিয়েই বিয়েটা হয়ে গেলো আমাদের। আমি এখন বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। নুপুর বধু সেজে আমার জন্য বাসর ঘরে বসে আছে। আমি বাসর ঘরে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। নুপুর আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার পায়ে সালাম করল।
আমি নুপুরের দুই হাত ধরে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আর কোলে তুলে খাটের উপরে নিয়ে বসালাম। আমরা দুজনেই অনেক্ষন গল্প করলাম। এর মধ্যে বেবির না রাখাও হয়ে গেছে। বেবির নাম টা আমাদের মধ্যেই থাক আপনাদের আর না বলি। রাত অনেক হয়ে গেছে এখন আমার আমাদের কাজ শুরু করি এবার আপনারা আসেন৷ আমাদের সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
জাহিদ আর নুপুর ডুবে গেলো গভীর ভালোবাসার সমুদ্রে। তারপর থেকে শুরু হয়ে গেলো তাদের জীবনের নতুন এক অধ্যায়। আর গল্পটা এখাইনে শেষ করে দেওয়া হলো।
____________সমাপ্ত_________
আচ্ছালামুয়ালাইকুম। আসা করি সবাই ভালোই আছেন। আপনাদের মনের মতো করেই ইন্ডিং দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কতটা পেরেছি জানিনা। গল্পটা কেমন লেগেছে আপনার মুল্যবান বক্তব্য কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলে নতুন কিছু লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। গল্পের মধ্যে ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে হ্যাপি রিডিং। দেখা হবে আবার নতুন কোনো গল্পে। আল্লাহ হাফেজ।